কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে যিকিরের গুরুত্ব ও ফযীলত
27/02/2011 00:19মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ও নুরে মুজাস্সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছে যিকিরের বহু গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
“তোমরা আমার যিকির কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো” (সূরা বাক্বারা ১৫২)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমি আমার বান্দার নিকটে সেরূপ যেরূপ সে আমাকে ধারণা করে। যখন সে যিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যখন সে একা একা আমার যিকির করে তখন আমিও তাকে একা একা স্মরণ করি। আর যখন সে মজলিসে আমার যিকির করে তখন আমি তাকে উত্তম মসলিসে স্মরণ করি।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ্)
প্রমাণিত হলো যে, বান্দা যত বেশী আল্লাহ পাক-এর যিকির বা স্মরণ করবে তত বেশী আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য ও রহমত লাভ করবে। তাই যিকিরকারীদের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার রবের যিকির করে আর যে যিকির করেনা, তাদের মেছাল বা উদাহরণ হলো, জীবিত ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়।” ( বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ্)
বান্দা যত বেশী বেশী যিকির করবে কামিয়াবী হাছিল করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
“তোমরা বেশী বেশী আল্লাহ পাক-এর যিকির করো, অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।” (সূরা জুমুয়া ১০)
যিকির বেশী করলে কতটুকু কামিয়াবী সে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাস করা হলো, ক্বিয়ামতের দিন কোন বান্দা আল্লাহ পাক-এর নিকট শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হবে? (জবাবে) তিনি ইরশাদ করেন, অধিক পরিমাণে আল্লাহ পাক-এর যিকিরকারী পুরুষ ও নারী। পুনরায় জিজ্ঞাস করা হলো, আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় জিহাদকারী অপেক্ষাও কি? (জবাবে) তিনি ইরশাদ করেন, হ্যাঁ, যদি সে নিজ তরবারী দ্বারা কাফির ও মুশরিকদেরকে কাটে এমনকি তার তরবারী ভেঙ্গে যায় আর নিজে রক্তাক্ত হয় তা হতেও আল্লাহ পাক-এর নিকট যিকিরকারী শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আহমদ শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ্)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না যে, তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে কোনটি উত্তম, তোমাদের রবের নিকট অধিক পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর এবং সোনা-রূপা দান করা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, এমনকি জিহাদের ময়দানে শত্রুর গর্দান কাটা ও তোমার গর্দান কাটা থেকেও উত্তম? (জবাবে) তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, আপনি বলে দিন ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর যিকির।” (মুয়াত্তয়ে মালিক, আহমদ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ্, মাছাবীহুস সুন্নাহ্, মিশকাত শরীফ , মিরকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে আরো ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রতিটি বস্তু পরিস্কার করার একটি মাধ্যম রয়েছে। আর অন্তর পরিস্কার করার মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর যিকির। আল্লাহ পাক-এর যিকির অপেক্ষা আল্লাহ পাক-এর আযাব থেকে অধিক পরিত্রাণ দানকারী আর কিছুই নাই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় জিহাদ করাও কি নয়? তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় তরবারী চালালেও নয় এমনকি যদি তা ভেঙ্গেও ফেলে। ” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ্ , দা’ওয়াতুল কবীর লিল বায়হাক্বী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফসমূহ যিকিরকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব নুরে মুজাস্সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য লাভের ও অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম বলার সাথে সাথে সমস্ত আমল এমনকি দান-ছদকা ও জিহাদের চেয়েও বেশী গুরুত্ব ও ফযীলত দেয়া হয়েছে।
তাই মহান আল্লাহ পাক বান্দাকে সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে ও অধিক পরিমাণে যিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশী বেশী আল্লাহ পাক-এর যিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর তাসবীহ্ পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব ৪১,৪২)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, আমি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সর্বশেষ যে হাদীছ শরীফ শুনেছি তা হলো, কোন আমল উত্তম এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য লাভের কারণ? (জবাবে) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার জিহবাকে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ পাক-এর যিকির দ্বারা সিক্ত রাখ।” (ইবনে নাজ্জার, কানযূল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, যখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হলো, ‘ আর যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে ............’ তখন আমরা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তাঁর কোন এক সফরে ছিলাম। তখন কিছু কিছু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম বললেন, ‘এ আয়াত শরীফ সোনা-রূপা সম্পর্কে নাযিল হলো আমরা যদি জানতাম, কোন সম্পদ উত্তম, তবে তা জমা করে রাখতাম’। (একথা শুনে) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর যিকিরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞ অন্তর ও ঈমানদার স্ত্রী যে তাকে ঈমান বা দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্য করে।” (আহমদ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ্ , মাছাবীহুস সুন্নাহ্ , মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সকাল-সন্ধ্যা ও দায়িমীভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকির করার তাওফীক দান করুন। কারণ জান্নাতবাসীদের কোন আফসুস থাকবেনা, শুধুমাত্র একটা আফসুস থাকবে তা হলো যে সময়টা তারা দুনিয়াতে যিকির ছাড়া কাটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতবাসীগণ কোন কিছুর জন্য আফসুস করবেনা। তবে যে সময়টুকু আল্লাহ পাক-এর যিকির ব্যতীত গত হয়েছে তার জন্য আফসুস করবে।” (দায়লামী শরীফ, দীনূরী, ক্বাবাসুম মিন নূরী মুহম্মদ)
Tags:
———
Back