হৃদয়ের টানে ছুটে চলি আমরা......

রোযা কী? রোযার উদ্দেশ্য ও ফজিলত।

27/02/2011 00:14

বর্ষপরিক্রমায় রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আমাদের দরজায় কাড়া নাড়ছে মাহে রমজান বা সিয়াম সাধনার মাস।
সিয়াম কি? সিয়াম একটি আরবী শব্দ তার শাব্দিক অর্থ কোন জিনিস থেকে বিরত থাকা বা থেমে থাকা। ইসলামি শরিয়তে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কিছু পানাহার, পাপাচার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা।
আল্লাহতালা মানবজাতির দুনিয়ার জীবনযাত্রার শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত যতগুরি শরীয়ত বা জীবনবিধান নাযিল করেছেন এই সিয়াম সাধনা তার প্রত্যেকটিরই অবিচ্ছেদ্ধ অংশ ছিল এখনও আছে। এই সিয়াম সাধনাকে সকল যুগের মানুষের জন্য ফরজ ছিল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কোনআনে বলেন: হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর।যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা আয়াত ১৮৩)
রোযার গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে রাসুর সা: বলেন :ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের উপর আর বিষয় গুলি হচ্ছে কালেমা, নামাজ , রোযা , হজ্জ ও যাকাত।
রাসুল সা: আরো বলেন : রোযা মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ। যুদ্ধের ময়দানে ঢাল যেমন প্রতিপক্ষের আঘাত কে প্রতিহত করে। রোযাও ঠিক তেমনি আমাদের বাস্তব জীবনে শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে ফিরিয়ে রাখে।

রোযার বিধানের উদ্দেশ্য কী?
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যমতে আমরা জেনেছি সিয়াম সাধনা আমাদের জীবন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিধান।এখন আমরা জানবো এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানের উদ্দেশ্য কী। রোযার বিধান ফরজ করার উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে আল্লাহ সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতের শেষে বলেন লা’আল্লাকুম তাত্তাকুন যার অর্থ আল্লাহভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পারা।
যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যদি একটু চিন্তা করি তবেই বুঝতে পারবো সিয়াম সাধনা কালে আমাদের মাঝে কোন প্রকার কুপ্রবৃত্তী বাসা বাধতে পারে না। এ মাসে আমরা সকল প্রকার পাপাচার, মিথ্যচারিতা, বেহায়াপনা, সুদ, ঘুষ, ও যৌন আকর্ষন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে একমাত্র আল্লাহভীতির কারনেই।
এই রমজানে যদি আমরা তাকওয়া অর্জন করতে না পারি, বেয়াপনা, বেপর্দা,অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে না পারি তাহলে দিনভর না খেয়ে থেকে পিপাসার কষ্ট নিয়ে থাকার কোন লাভ নেই। এ সম্পর্কে রাসুল সা: বলেন: যে ব্যত্তি রোযা রাখা সত্ত্বেও মিথ্যা কথা নিষিদ্ধ কাজ ত্যগ করতে পারলো না, অযথা তার পানাহার বর্জন করে উপবাস থাকার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী )


রোযার ফজিলত।
রোযার ফজিলত আমরা নিন্মের কয়েকটি হদিস থেকে আমরা জেনে নেই।
১. হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন,রাসুল সা. বলেছেন : যে লোক রমযান মাসে রোযা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।(বুখারী ও মুসলিম)
২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি, যে লোক একটি দিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডল জাহান্নাম হতে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৩. হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সা. বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। সে দরজা দিয়ে শুধুই রোযাদাররাই প্রবেশ করবে।
৪. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : তোমাদের নিকট রমযান মাস সমুপস্থিত । তা এক অত্যান্ত রবকতময় মাস । আল্লাহ এ মাসে তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজসুমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় শয়তানগুলো আকট করে রাখা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে লোক এ মাসে তার মহা মহাকল্যাণ লাভ হত বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই হতভাগা। (নাসাঈ ও বায়হাকী)

তাকওয়া অর্জন, আল্লাহ কাছে নিজেকে তাঁর প্রিয় এক বান্দা হিসেবে উপস্থাপন, নিজের গুনাহসমূহ মাফ করানো,বেশী বেশী ইবাদাত করা, নফল নামাজ আদায় করা, আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত ইত্যাদি কাজ করে আল্লহার নৈকট্য হাসিল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

HTML Comment Box is loading comments...

free counters
Back

Search site

পরিচালনায়- নাজমুল হাসান >>>> সম্পাদনায়-আরাফাত রহমান রানা

obj=new Object;obj.clockfile="5031-blue.swf";obj.TimeZone="GMT0600";obj.width=145;obj.height=50;obj.wmode="transparent";showClock(obj);